দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত যশোর জেনারেল হাসপাতাল

শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত যশোর জেনারেল হাসপাতাল
apps

দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার জন্য আসা মানুষের দুর্ভোগ ও হয়রানির শেষ নেই। হাসপাতালে প্রবেশ থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত নানা ঝামেলার মধ্য দিয়ে রোগীদের যেতে হয়। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের পূর্ণাঙ্গভাবে চিকিৎসাসেবা পেতে সময় লেগে যায় কমপক্ষে তিন দিন। রোগীদের ভাষ্যমতে, টিকিট কাউন্টার, চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ, ক্যাশ কাউন্টার, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দুর্ভোগের কারণে মূল সেবা পেতে রোগীকে কালক্ষেপণ করতে হয়। আবার সঠিক সময়ে রিপোর্ট না পেয়ে অনেকে চিকিৎসক না দেখিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে টিকিট কাউন্টারে। অথচ মাত্র দুটি কাউন্টার থেকে টিকিট বিতরণ করা হয়। যে কারণে টিকিট পেতে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। টিকিট নিয়ে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়ে আবার দুর্ভোগের মুখে পড়ে রোগীরা। শ’শ’ রোগী সিরিয়ালে থাকলেও দেখা যাচ্ছে চেম্বারে চিকিৎসক নেই। নাস্তার জন্য বের হয়ে আধা ঘণ্টায়ও চেম্বারে ফেরেন না চিকিৎসক। আবার চেম্বারে থাকলেও রোগীর চিকিৎসা প্রদানে রয়েছে গাফিলতি। যে কারণে দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে রোগীদের দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে। আবার চিকিৎসক যদি ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনা দেন তাহলে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গিয়ে রোগীদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। বেলা ১২ টার পর ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা নেয়া বন্ধ রাখা হচ্ছে।

যে কারণে অনেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষার টাকা দিতে ব্যর্থ হন। এজন্য রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় পরের দিন পর্যন্ত। আবার টাকার রশিদ কেটে প্যাথলজি বিভাগে রক্ত প্র¯্রাব দেওয়ার একদিন পর দেয়া হয় পরীক্ষার রিপোর্ট। রোগীর প্রকৃত চিকিৎসাসেবার আগে এভাবেই কেটে যায় তিন দিন। খাজুরা এলাকার কাওছার আলী জানান, মঙ্গলবার তার এক আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে কোন ওষুধ না লিখে রক্ত প্র¯্রাব ও এক্স-রে করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু সময় পার হয়ে যাওয়ার আর পরীক্ষা করতে পারেননি। যে কারণে চিকিৎসাসেবা মেলেনি। কওছার আলী আরও জানান, সকাল ৯ টায় হাসপাতালে পৌঁছেও বিনা চিকিৎসায় বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। টিকিট পেতে অপেক্ষা, চিকিৎসক দেখাতে অপেক্ষা পরে ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ থাকায় পরীক্ষার টাকা দিতে পারেননি।

চুড়ামনকাটি গ্রামের আবুল কালাম, ভাগলপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, বেলা ১২ টার পর ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ করার কারণে তাদের মতো অনেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারেননি এজন্য তাদের আবার পরের দিন (বুধবার) আসতে হয়েছে হাসপাতালে। টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে আবার দীর্ঘ লাইনের কারণে তাদের দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। রোগীদের রক্ত ও প্র¯্রাব নেয়ার পর বলা হচ্ছে আগামীকাল রিপোর্ট দেয়া হবে। অর্থাৎ দুই দিন হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা মেলেনি। একাধিক রোগী জানিয়েছেন, প্যাথলজি বিভাগ থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট পরের দিন দেয়ার কারণে রোগী ও স্বজনদের কষ্ট বেড়েছে। যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়লেও রিপোর্টের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন না। তাদের দাবি, সরকারি এই হাসপাতালে তিন দিন আসার পর মেলে প্রকৃত চিকিৎসাসেবা। তারা ব্যাখা করে বলেন চিকিৎসার আগেই পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনায় ১ দিন , ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিতে ১ দিন ও প্যাথলজি বিভাগ থেকে রিপোর্ট দিতে একদিন। সব মিলিয়ে তিন দিনের আগে অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা পান না।

এদিকে, অন্তবিভাগে রোগীদেরও চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা দুর্ভোগ ও হয়রানি। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টরা রক্ত ও প্রসাব সংগ্রহ করতে আসেন দুপুরের পর। অনকে সময় স্বজনরা তাগিদ দিলে বলা হয় রোগীকে এখানে আনেন। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করার কারণে তারা রিপোর্ট হাতে পান পরের দিন বেলা ১টার পর। রোগীদের দাবি অনুযায়ী টিকিট কাউন্টার , ক্যাশ কাউন্টার ও প্যাথলজি বিভাগে জনবল বাড়ানো ও চিকিৎসকদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হলে রোগীদের দুর্ভোগ ও হয়রানি কিছু লাঘব হবে।

সূত্র জানায়, দুর দুরন্তের অনেক রোগী খুব সকালে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য বুকভরা আশা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। কিন্তু হাসপাতালে এসে তাদের সকল আশা শেষ হয়ে যায়। পরতে পরতে দুর্ভোগের কবলে পড়ে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। চিকিৎসাসেবায় অব্যবস্থাপনার কারণে দূরদূরন্তের মানুষের কষ্টের শেষ নেই। এসব বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, দুপুর ১২ টার পর যারা রক্ত প্রস্রাব দেন তাদের রিপোর্ট একদিন পরে দেয়া হয়। কিন্তু আগে ভাগে আসা রোগীদের রিপোর্ট দিনের দিন দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বরতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দুপুর ১ টা পর্যন্ত টাকা জমা নেয়ার জন্য দায়িত্বরতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোগীর চাপের কারণে সকলকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

Development by: webnewsdesign.com