দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাধবপুরের দেশিয় প্রজাতির মাছ

বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ

দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাধবপুরের দেশিয় প্রজাতির মাছ
apps

হবিগঞ্জের মাধবপুরে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। লোককথায় ‘ভাতে মাছে বাঙালী’ এ কথাটি আমরা বেশ গর্ব করে বলি। বোধ হয় সেই গর্বটা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির পথে! কাগজে পত্রে ভরা বর্ষা হলেও বাস্তবে তেমন একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ হাওর গুলোসহ নদ-নদীতে পানি নেই। যেখানে পানি নেই, সেখানে মাছের প্রাচুর্যতা আশা করা সুদূর পরাহত। বাংলাদেশকে বলা হয় নদী মাতৃক দেশ।

এ দেশে প্রায় ৪০০ এর অধিক নদী আছে, আছে অসংখ্য খাল-বিল, ঝিল, নালা, ডোবা। এক সময় খাল, বিল-ঝিলে প্রচুর পরিমানে দেশিয় মাছ উৎপাদন হতো। কালের বিবর্তনে দেশিয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। এমনকি ২৬০ প্রজাতির দেশিয় মাছ থেকে ৭০ প্রজাতির দেশিয় মাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। গ্রামীণ সমাজে এক সময় জাল, ফেলুন, পলো, খড়া, ভেলকি, বর্ষি দিয়ে পুরুষসহ নারীকে মাছ ধরতে যেখা যেতো। এমনকি প্রচুর বৃষ্টিপাতের দিনে শিং, মাগুর, কই মাছ কাঙা দিয়ে পুকুর থেকে পাড়ে ওঠে যেতো। তখন নারী-পুরুষরা এ গুলো কুড়িয়ে নিতেন।

মাধবপুর উপজেলার বুল্লা বিল, বাকসাইরবিল, বরগ বিল, মাঝিশাইল বিল, শিবপুর বিল, জোয়ালভাঙ্গা বিল এলাকা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এমনকি এসব হাওরেও আগের ন্যায় মিঠা পানির মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। যেখানে বর্ষা মৌসুমে দেশিয় মাছে সয়লাব থাকতো, সেখানে দেশিয় মাছের আকাল চলছে। কোনো জেলে বাজারে দেশিয় মাছ বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসলে হুমড়ি হয়ে পড়েন ক্রেতাগণ। তখন দেশিয় মাছের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যায়। বাজার সয়লাব হাইব্রিড মাছে। এর মধ্যে পাঙ্গাশ, সিলভার, মেডেলকাপ, ঘাছকাপ, তেলাপিয়া, বার্মা রুই ইত্যাদি। এর মধ্যে চাষকৃত কই, শিং, মাগুর, পাবদা মাছও আছে। মাধবপুরের প্রায় সব কয়টি পুরাতন পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে।

এসব পুকুরে কই, শিং, মাগুর, গুতুম, টেংরা, খইয়া, পুটি, সরপুঁটি, মলা, চাপলিয়া, বাইম, শোল, গজার, কাংলা, চিতল প্রভৃতি মাছ উৎপাদন হতো। বিদেশি মাছ চাষ হওয়াতে মিঠা পানির সু-স্বাদু মাছ উৎপাদন হওয়ার ক্ষেত্র কমে গেছে। তাছাড়া হাওরে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে দেশিয় মাছের প্রজনন ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আলাউদ্দিন আল রনি বলেন, হাওর-বাওর ও ছোট ছোট জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের কারণে সমতল ভূমিতে যথাসময়ে পানি না ওঠা, বড় জলাশয়ের চারপাশে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকারের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও জ্যৈষ্ট এবং আষাড় মাসে রেণু পোনাগুলো অবাধে আহরণ, প্রজননক্রম মাছ না থাকার ফলে দেশিয় মাছ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু আছাদ ফরিদুল হক জানান, পর্যাপ্ত পানির স্বল্পতা, নির্বিচারে মাছ ধরা, রেণু মাছ নিধন, কারেন্ট জাল ব্যবহারের কারণে মিঠা পানির সু-স্বাদু মাছ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। মাছের প্রজনন সময় হচ্ছে বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাস। এ দুই মাসে যদি পর্যাপ্ত পানি থাকে এবং মা মাছ এবং পোনা মাছ নিধন করা না হয়। তাহলে আশা করা যায় এসব অঞ্চলে দেশিয় মাছের অভয়ারণ্য আবারও হবে।

Development by: webnewsdesign.com