তিন বিঘা জমিতে গাঁদা আর দুই বিঘা জমিতে রজনী গন্ধা ফুলের চাষ করেছিলেন হোসেন আলী। প্রায় ১ লাখের বেশি টাকা খরচ করার পর খেতে সবে মাত্র ফুল উঠা শুরু করেছিল। সপ্তাহে গড় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রিও করছিলেন। এভাবেই আরও তিন মাস ফুল বিক্রি করা যেত কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলচাষি হোসেন আলীর বাড়ি ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামে। হোসেন আলী চলমান লকডাউনে ফুল বিক্রি করতে না পেরে দুই বিঘা গাঁদা ও এক বিঘা জমির রজনী গন্ধা ফুলের জমিতে চাষ করে ফেলেছেন। করোনার এ আবহাওয়া কবে স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত জেনেই অধিকাংশ জমির ফুল তুলে দিয়েছেন।
একইভাবে দুই বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। এক সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে। এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছ মরে যাচ্ছে। গাছ থেকে একবার ফুল তুলে ফেলে দিতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। এক সপ্তাহে একবার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিয়েছেন।
এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে সর্বাত্ম লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন আরও জানায়, এ বছর প্রায় ৭০ হাজার টাক খরচ করে এই চাষ করেছিলাম। যা করোনার কারণে সবই মাটি হয়ে গেল।
একই রকম অবস্থা জেলার শত শত ফুলচাষির। এ বছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনী ২৪ হেক্টর বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমন ধরা পড়ার পর দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। ফলে ফুল বিক্রিতে ধ্বস নামায় জেলার ফুলচাষিদের ব্যাপক লোকসান হয়েছিল। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরু ছাগলকে খাইয়েছে।
করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসার পর আবারও চাষিরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে সবেমাত্র ফুল বিক্রি শুরু করেছিল। কিন্তু এবারো করোনার কারণে সরকার লকডাউন ঘোষনা করায় সে স্বপ্ন দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ফুল চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গরম জাতের গাদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল তুলে একেবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যার কারণে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয় দেড় লাখ টাকার মত। এবার আবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম কিন্তু আবারও করোনা আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।
ফুলচাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১ সালের কথা। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সেই সাথে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার ফুলকর্মী নারী-পুরুষের।
Development by: webnewsdesign.com