জালিয়াতি রোধে রূপগঞ্জে সতর্ক এসিল্যান্ড!

বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১ | ৬:০১ অপরাহ্ণ

জালিয়াতি রোধে রূপগঞ্জে সতর্ক এসিল্যান্ড!
apps

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জমির দাম আকাশচুম্বি। আবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে শতাধিক আবাসন কোম্পানী।

শীতলক্ষ্যার পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ে এভাবে গড়ে ওঠা এ উপজেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান আর ভৌগলিক গুরুত্ব বিবেচনায় রয়েছে জমির ব্যপক চাহিদা। ফলে প্রয়োজনে শিল্প মালিকদের কাছে জমি বিক্রি করছে স্থানীয় মালিকরা।

তবে বিক্রিতে রাজি না হওয়া জমি মালিকদের বেকায়দায় ফেলতে একটি শক্তিশালী জালিয়াত চক্র সক্রিয় রয়েছে। এতে একের জমি অন্যের নামে সম্পাদন এমনকি নামজারী ও মিসমোকদ্দমায় জয়ী হতে দলিল জালিয়াতি করে আৎসাতের ঘটনা অহরহ।

এসব পরিস্থিতিতে সম্প্রতি নড়ে চড়ে বসেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)সহ ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তারা। তারা সতর্ক অবস্থানে থেকে নামজারীসহ বিভিন্ন দফতরিক কাজে সতর্ক থেকে মালিক ও দলিলাদি যাচাই বাচাই করছেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভুমি জাতিয়াত চক্রে হোতা বোরহান মোল্লা নামের এক জালিয়াতকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত বোরহান মোল্লা উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মর্তুজাবাদ মোল্লাবাড়ী এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় ভুমি অফিসের নাজির কাম-ক্যাশিয়ার নাসির উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে ভুমি জালিয়াত চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ওই মামলা এজাহারের বরাত দিয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আমলাব মৌজার সিএস ও এসএ দাগ নং- ৮৭৩ ও আরএস- দাগ নং-১৩০৭ এর ১৪ শতাংশ জমি জমা খারিজের জন্য সাফ কবলা দলিল (দলিল নং-১৭১৯) সুত্রে সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর আবেদন করেন একটি প্রতারক চক্র। পরে সহকারী কমিশনার (ভুমি) দলিলটি যাচাইয়ের জন্য রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি (পুর্ব) কে অবহিত করেন। দলিল যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় (দলিল নং-১৭১৯) দলিলটি রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি (পুর্ব) অফিসে রয়েছে।

এ দলিলটির তফসিল সম্পত্তি অন্য মৌজা এবং দাতা-গ্রহিতা, দাগ, খতিয়ান ভিন্ন। এতে প্রমানিত হয় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া দলিলটিতে রূপগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রার (পুর্ব) রেজাউল করিম বক্সি এর নাম, সিল, ও স্বাক্ষর নকল করে জালিয়াতি করা হয়। এক পর্যায়ে ভুমি জালিয়াত চক্রের মুল হোতা বোরহান মোল্লাকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
পরে চক্রের হোতা বোরহান মোল্লা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলটি তারা নিজেরা করেছেন বলে স্বীকার করেন। এছাড়া সফিউল্লাহ, জহিরুল ইসলাম, নাজমুল হক ও শিউলি আক্তার নামের আরো ৫জন জালিয়াত চক্রের সদস্য এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলেও স্বীকারোক্তি দেন। ওসি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত বোরহান মোল্লাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জালিয়াত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

এমনই ভাবে উপজেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মোগলান মৌজার রায় চন্দ্র সাহার সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জমি মধূখালীর চিহ্নিত জালিতচক্র হাবিব, মোগল ও গুতিয়াবোর আমিরসহ একটি চক্র হাতিয়ে নেয়। একই গ্রামের বছরউদ্দিনের ছেলে জব্বার মিয়ার ১৭ শতক জমি নরসিংদী থেকে ভুয়া দাতা ব্যবহার করে একটি আবাসন কোম্পানীতে বিক্রি করে দেন।

ওই জমি জমা খারিজ রয়েছে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসে।একইভাবে ভোলাবোর পালবাড়ির সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে ভুয়া দলিল ব্যবহার করে একটি চিহ্নিত চক্র জমা খারিজ করিয়ে অপর একটি আবাসন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেয়। আবার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কেশরাবো মৌজার ১৬ বিঘা জমি কাঞ্চনের মোবারক নামীয় একটি জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। পরে কেশরাবো মৌজার জমি মালিকরা ভুমি অফিসে ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানান। এভাবে তারাবো পৌরসভা এলাকায় আরো ৪টি জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হয়।

সূত্র জানায়, মিসমোক্দ্দমায় জয়ী হতে একটি চক্র ফটোকপির মাধ্যমে জালিয়াতি করে নকল দলিল সৃজন করে। এতে প্রকৃত মালিককে না জানিয়ে শুধূমাত্র ভুমি কর্মকর্তাদের দেখিয়ে জমা খারিজ কেটে নেয়। এতে প্রকৃত জমি মালিকরা চরমভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।

মুড়াপাড়া ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতি করে একের জমি অন্যের নামে নামজারী করাতে একটি জালিয়াত চক্র সক্রিয় রয়েছে। তবে এসিল্যান্ড মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনায় আমরা জমি মালিকদের সাথে কথা বলে জমা খারিজের প্রস্তাব দিচ্ছি। এতে জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে।

রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, জালিয়াতি করে বর্তমানে কোন অবস্থাতেই একের জমি অন্যের নামে নেয়ার সুযোগ নাই। আমরা সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ও নতুনভাবে নকল উত্তোলন করে দলিলের সততা যাচাই করে থাকি। পাশাপাশি জমি মালিকদের মুল কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য করি। এভাবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তবে অতিরিক্ত কাজেপ চাপ থাকায় সব যাচাই বাচাই সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এদিকে জমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুল দলিল ও পর্চা দেখিয়ে এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রকৃত জমি মালিকদের হাতে যার যার জমির খাজনাদি বুঝিয়ে দিলেই জালিয়াতি প্রতিরোধ সম্ভব। এসিল্যান্ডের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

অপরদিকে সতর্ক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ পশ্চিম সাবরেজিস্ট্রার শফিউল বারী। তিনি বলেন, রূপগঞ্জে অধিকহারে জমি কেনা বেচা হয়। কাজের চাপ থাকে। তবু মুল জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে,সরাসরি দাতা গ্রহিতার বিষয়ে সততা যাচাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দলিল লিখকদেরও সতর্ক করা হয়েছে। অভিযুক্তের সনদ বাতিল করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত মালিকদের নিরাপত্তায় জালিয়াত চক্রকে সনাক্ত করে আইনের আঁওতায় নেয়া হচ্ছে। কারন একটি জমির নামজারী বা মিসমোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে পক্ষ বিপক্ষ, ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কাননগো, নাজিরগং যাচাই বাচাই করেন। পরে আমার কাছে আসে। তবে অনুরোধ থাকবে জমি মালিকরা যেন তাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভুমি কার্যালয়ে হোল্ডিং এ যার যার মোবাইল নাম্বার দিয়ে রাখেন। এতে জালিয়াতি রোধ সহজ হবে।

Development by: webnewsdesign.com