ছাত্রলীগকে বাটপার বলে ক্ষমা চাইলেন ইবি শিক্ষক

শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০ | ৮:৩৯ অপরাহ্ণ

ছাত্রলীগকে বাটপার বলে ক্ষমা চাইলেন ইবি শিক্ষক
apps

সম্প্রতি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নারায়নগঞ্জ জেলা সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক চিত্রা ঘোষ পরমার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রলীগ কর্মী।

ওই ছাত্রের নাম শাহিনুর ইসলাম ফিরোজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। চিত্রা ঘোষকে সমালোচনা করায় পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল তাকে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে বকাঝকা করে ফেসবুকে ব্লক করেছেন বলে জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে, গতকাল ফেসবুকে চিত্রা ঘোষ পরমার বক্তব্য সমালোচনা করে শাহিনুর ইসলাম ফিরোজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘ওরা ধর্ষণের বিচার চায়, না সিগারেট খাওয়ার অধিকার চায়? এটা কি ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষণ?’

তিনি লিখেন, ‘যিনি কিনা বাঙালি সংস্কৃতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পশ্চিমা, ল্যাংটো, সংস্কৃতি চালু করার প্রয়াস দেখিয়েছেন যা আমাকে এবং আমার বাঙালি সংস্কৃতিকে ভীষণভাবে আঘাত করেছে তার দরুন আমি জানতে চেয়েছি যে এটা কি আদৌও ধর্ষণের বিচার চাওয়া নাকি আমার দেশকে একটি ন্যাংটো সমাজ ব্যবস্থার চালু করার দাবি?’

স্ট্যাটাসের পর অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল ওই শিক্ষার্থীকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে বকাঝাক করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে শাহিন। ওই শিক্ষক বলেন, ‘শাহিন তুই তো ছাত্রলীগ করিস তাই না? তোর যে সভাপতি ছিলো না শাহিন (সাবেক সভাপতি) সে এক বাটপার তুই এক বাটপার।’ এর আগে শিক্ষক দিবলে এক শিক্ষকের সাথে ফেসবুকে ছবি দেওয়ায় শাহিনকে শিবির আখ্যা দেন বলেও জানা গেছে।

এসময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি তো ধর্ষনের কঠোর বিচার চাই, কিন্তু ধর্ষণের বিচার চাওয়ার নামে রাত তিনটা পর্যন্ত বাহিরে থাকবে, প্রকাশ্যে দিবালোকে বিড়ি খাবে ছোট ছোট পোষাক পড়বে এগুলো তো আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না।’ এরপর ওই শিক্ষার্থীকে ‘তুই তো শিবিরের মত কথা বলছিস’ বলে কল কেটে দেয়। এঘটনা গুলো লিখে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছে শাহিন।

পরে ওই শিক্ষক শাহিনকে ব্লক করে ফের ফেসবুকে স্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার সাথে মেয়েদের পোশাক ও আধুনিক চলাফেরাকে যারা সম্পর্কিত করে তাদেরকে ব্লক করা শুরু করেছি। বর্তমান ছাত্রলীগের এক কর্মীকে দিয়ে শুরু করলাম।’

শাহিন বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নের এক নেত্রী চিত্রা ঘোস পরমা যে অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছে তার সমালোচনা করেছি। সমালোচনা করায় আমি কী শিবির হয়ে গেলাম? যারা ধর্ষণের বিচার চান আপনারা তো তাইলে সবাই শিবির?’

তিনি বলেন, ‘মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়ে মুসলিম রীতিনীতি অনুসরণ করে জীবন-যাপন করলে কী ছাত্রলীগ করা যায় না? নাকি ইসলামিক রীতি মেনে চললেই শিবির হয়ে যায়? যদি তাই হয় তাহলে বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান দেশে আমরা সবাই শিবির তাই না? তাহলে ছাত্রলীগকে বাদই দিলাম। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে বামপন্থী বিভিন্ন সংগটন যারা করে তারা কী শিবির?’

এই স্যাটাসের কমেন্টে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগ কর্মীকে ব্লক মারলাম! বাহ খুব সওয়াবের কাজ করেছেন তিনি! ছাত্রলীগ যদি ক্ষেপে যায় তাহলে এদের মত সস্তা চেতনাবাজ দের অস্তিত্ব থাকবেনা।’

অপর কমেন্টে আরিফ হাসান বলেন, ‘এইসব সিঙ্গারা-সমুচা মার্কা শিক্ষকদের আচরণে মন খারাপ করার কোন কারণ নেই। মূলত ১৮/২০ লাখের শিক্ষকগুলোর কথাবার্তা এমন হওয়ার কথা। এগুলো যে কি খেয়ে মাইস্টোর হইছে! তবে আদর্শ শিক্ষকবৃন্দ আমাদের মাথার মণি।’

অভিযুক্ত শিক্ষক অপর এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আমি ক্লাসে ছাত্রদের পরিসংখ্যান পড়াই। ব্যবহারিক পরিসংখ্যান পড়ানোর সময় রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক উদাহরণ আসে। ক্লাসের ছাত্রদের কার কি আদর্শ সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় না। কিন্ত বিভাগের বাইরে আমার সাথে যারা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে চায়, আমার সাথে তাদের আদর্শের মিল আছে কিনা সেটা আমি ভাল করে যাচাই করে নেই। মিল না পড়লে আমি সম্পর্ক রাখি না। এই জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিয়ে লাভ নেই। আই ডন্ট কেয়ার।’

শাহিনুর রহমানের সাথে এমন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল বরাবর খোলা চিঠি প্রদান করেন ছাত্রলীগ নেতা রিজওয়ানুল ইসলাম। পরে ওই শিক্ষক রেজওয়ানের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাসটি তুলে নিতে অনুরোধ করেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রিজওয়ানুল ইসলাম স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আমার লেখা খোলা চিঠি পেয়ে রাসেল স্যার আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এবং ভবিষ্যতে এধরনের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবেন বলেছেন এবং আমার পোস্টটি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন। তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্টাটাস ডিলিট করালম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার আমাকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা নিজের মত করে ব্যাখা করেছে। তারপর স্যার বলেছে, পোস্ট চাইলে রাখতে পারো কিংবা সরাতে পারো। তবে ডিলেট করার অনুরোধ করছি। পরে আমি পোস্ট ডিলেট করে দেই।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আমি এখনো এ ঘটনা সম্পর্কে জানিনা। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো কিছু বলতে পারেন কিন্তু ছাত্রনেতা হিসেবে বাটপার বলার অধিকার তার নেই। এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। তিনি এমন বলে থাকলে কেন বলেছেন তা তাকে বলতে হবে। আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সম্পর্কে এরকম মন্তব্যের জন্য বর্তমান ছাত্রলীগ তার উচিৎ জবাব দেবে বলে আমি আশা করি।’

আলতাফ হোসেন রাসেল সাংবাদিকদের জানান, ‘যারা অভিযোগ করছে তাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে তবে দেখান। আমাকে শিক্ষকতার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কে শিবির করলো বা ছাত্রলীগ করলো এটা আমার দেখার দায়িত্ব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। ভিসি স্যারকে জানাবো।’

Development by: webnewsdesign.com