সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি চায়ের দোকান থেকে মোঠোফোন চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নিযার্তনের ঘটনায় দ্বিতীয়বার অনুষ্টিত শালিস বৈঠকেও হাজির হয়নি অভিযুক্তরা। গত শুক্রবার উপজেলার স্থানীয় ধারন বাজারে এ শালিস বৈঠক অনুষ্টিত হয়। ওই ঘটনার খবর পেয়ে ছাতক থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিযার্তনের শিকার কিশোরের পিতা আবদুন নূরকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের কথা বলা হয়।
অভিযোগ উঠেছে- একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে ঘটনার নেপথ্যের নায়ক চা বিক্রেতা জিল্লু মিয়ার অব্যাহত হুমকি দমকির কারনে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে নারাজ নিযার্তিত কিশোরের হতদরিদ্র পিতা আবদুন নূর। ১৭ বছরের কিশোরকে নির্জন একটি মাঠে হাত পা বেঁধে, কাপড় ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে পাশবিক নিযার্তন করার ঘটনায় সহযোগীরা আড়ালে থাকলেও মূল হোতা চা-বিক্রেতা জিল্ল মিয়া প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছ। এ নিয়ে চলছে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
এদিকে তারিখের অন্তরালে নিযার্তিত পরিবার ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশংষ্কা রয়েছে। কিন্ত নির্মম নিযার্তনের শিকার হওয়ার পরও দুবর্ৃত্তদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ কিশোর শামীমের পরিবার।
জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার উপজেলার ধারন বাজারস্থ জিল্লু মিয়ার মালিকানাধিন চায়ের দোকান থেকে ছোরাব আলী নামে এক ব্যক্তির মোঠোফোন হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা জামানত নিয়ে বিষয়টি আপোষ মিমাংশার জন্য শুক্রবার শালিস বৈঠকের তারিখ নিধার্রন করেন। কিন্ত ওই শালিস বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০ টার সময় চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নেতৃত্বে গ্রাম্য কবিরাজের নিকট তদবির করার কথা বলে কিশোর শামীমকে নিয়ে যান কতিপয় যুবক। স্থানীয় ধারন বাজারের উত্তরে একটি বেত বাগানে নিয়ে কিশোর শামীমের হাত-পা বেঁধে পাশবিক বর্বর নিযার্তন করা হয়। তার দুটি পা ভেঙ্গে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। শেষে তাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে এসে ধারন বাজার সংলগ্ন একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে ফেলে রেখে যায় দুবর্ৃত্তরা।
পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধার করে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নিযার্তিত কিশোরের অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভতর্ী ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনায় পূণার্বৃত্তি হওয়াতে শালিসকারীগণ ওই চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা জামানত নেন। গত ৩ জানুয়ারি স্থানীয় ধারন বাজাওে শালিস বৈঠক অনুষ্টিত হয়। কিন্ত বৈঠকে জিল্লু মিয়ার সহযোগীরা উপস্থিত না হওয়াতে আবারো শালিস বৈঠকের আহবান করা হয়। এ শালিস বৈঠক গত ১০ জানুয়ারী শুক্রবার অনুষ্টিত হলেও হাজির হয়নি জিল্লু মিয়ার সহযোগীরা।
এতে ফের আগামী সোমবার শালিস বৈঠক আহবান করা হয়েছে। এ বিষয়ে চা- বিক্রেতা জিল্লু মিয়া জানান, আগামী সোমবার আবারো শালিসের তারিখ নিধার্রন করা হয়েছে। আগামী তারিখে অন্যন্যদের উপস্থিত থাকার বিষয়টি অবহিত করার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশবিক নিযার্তনের শিকার কিশোর শামীমের পিতা আবদুন নূর আগামী সোমবার ফের শালিস বৈঠকের তারিখের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনার খবর জানতে পেরে থানা পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে। কিশোরের পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্ত এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, কিশোর নিযার্তনের ঘটনায় অপরাধীদের গেফতারের জন্য আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Development by: webnewsdesign.com