বাংলা সনের অগ্রহায়ণ মাস সবে শুরু। যদিও প্রায় মধ্যরাত ও ভোরে হিম হিম ভাব নিয়ে শীত অনেকটাই অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অবশ্য পঞ্জিকা মতে শীত আসতে আরো এক মাস বাকি। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামগঞ্জে শীতের আমেজ আসতে শুরু করে হেমন্তের শেষ দিকে। তবে ইট-কাঠ-পাথরের চাঁদপুরে সেই বাতাস ঢুকতে একটু সময় নেয়।
তবু চাঁদপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিপণি বিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্র নিয়ে বিক্রেতাদের অপেক্ষা শুরু হয়ে গেছে। একইসঙ্গে অনেকটা জমেও উঠেছে চাঁদপুরের ফুটপাতগুলো। মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, হাইমচরসহ প্রায় সব এলাকায় শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে।
অবশ্য বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত বছরের এই সময়ে শীতের পোশাক বিক্রি জমজমাট থাকলেও এবার মন্দা। এ ছাড়া করোনার কারণে মানুষ আর্থিক সংকটে থাকায় এখনো গরম পোশাক কিনতে মার্কেটে আসছেন না। তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশুদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাতমোজা, মাফলার, সোয়েটার, জাম্পার, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, শীতের কাপড়ের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু না হলেও প্রতিদিন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। চলার পথে একটু থেমে নেড়েচেড়ে দেখছেন অনেকেই। আগামী ১০-১৫ দিন পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা তাদের। চাঁদপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার ফুটপাত-রাস্তায় ভ্যানে করে সারা বছর যারা শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট বিক্রি করেন, তারাই এখন রঙ-বেরঙের শীতের কাপড়ের পসরা বসিয়েয়েছেন। পথচারীরাও নেড়েচেড়ে দেখছেন, ঠিক করছেন কোনটা কেনা যায়।
এদিকে কোভিড-১৯ করোনা মহামারীর মধ্যে এবার দুই ঈদ আর পূজায় কাপড়ের ব্যবসা তেমন ভালো হয়নি। এবার শীতকে সামনে রেখে আশা দেখছেন বিক্রেতারা।
মতলব উত্তরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানে ঝোলানো পোশাকের ধরনও বদলাতে শুরু করেছে। ফুটপাতেও সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর, শাল, বাচ্চাদের কাপড়ের জুতা, হাত ও পায়ের মোজা, কানটুপিসহ নানা শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কোনো কোনো ব্যবসায়ী গুদামে শীতবস্ত্র মজুদ করছেন; শীত পড়লেই দোকানে বের করবেন।
তবে এবার শীতের কাপড়ের দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হবে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, মহামারীর কারণে অনেক কোম্পানি কাপড়, সুতা ও অন্যান্য এক্সেসরিজ সময়মতো আমদানি করতে পারেনি। ফলে অন্য বছরের চেয়ে এবার শীত মৌসুমের কাপড় প্রস্তুত কম হয়েছে। আবার শীতের সঙ্গে যদি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, ক্রেতা যদি সেভাবে না পাওয়া যায়, সেই শঙ্কাও আছে ব্যবসায়ীদের মনে।
ছেংগারচর বাজারে নানা ধরনের শীতবস্ত্র নিয়ে পাশাপাশি বসেছেন কয়েকজন। তাদেরই একজন শাহজাহান বলেন, সপ্তাহ দুই হল শীতের কাপড় এনেছি। গত শনিবার সারা দিনে আটশ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। শাহজাহান বলেন, শীতের কাপড়ের ব্যবসা হয় অল্প কয় দিন, এখন তো খচরই উঠছে না। দিনে যদি আট-নয় হাজার টাকা বিক্রি হয়, তখন বেশ লাভ থাকে। না হয় লোকসানই হবে।
শাহজাহানের কাছ থেকে দুটি সোয়েটার কিনেছেন ফলের ব্যবসা করা কবির হোসেন। তিনি বলেন, শীতের কাপড় কেনার পরিকল্পনা ছিল না। গতরাতে বৃষ্টিতে একটু শীত পড়তে শূরু করেছে ও এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের কাছে পেয়ে কিনে ফেললাম। এগুলো তো আর কয়দিন পরই লাগবে, সব সময় তো হাতে সময় থাকে না, সে জন্যই নেওয়া।
ছেংগারচর এলাকায় বাচ্চাদের কাপড়ের জুতা, মোজা ও টুপি বিক্রি করছিলেন সফিক রানা। তিনি জানান, গত সপ্তাহে এসব মালামাল তুলেছেন। দাম দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকার মধ্যে। সফিক রানা বলেন, বিক্রি নেই বললেই চলে। শীত পড়তে শুরু করলে তখন মানুষ হয়ত কিনবে।
নতুনবাজারে ফুটপাতে বাচ্চাদের রঙ-বেরঙের সোয়েটার তুলেছেন সাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করে হালকা শীতের একটা আবহ দেখা দিয়েছিল, তখন অনেক দোকানী শীতের কাপড় উঠিয়েছেন, কিন্তু এখন তো গরমই বলা চলে। তাই বিক্রি তেমন হয় না। হঠাৎ হঠাৎ কোনো কাস্টমার এসে দরদাম করছে। অল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছি।
গতবারের চেয়ে এবার শীতবস্ত্রের দাম কিছুটা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছর পাইকারিতে যে সোয়েটার ২৬০ টাকায় কিনেছিলেন, এবার সেটা ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, কারখানাগুলো করোনার কারণে মাল কম তৈরি করেছে। শীত যদি বেশি পড়ে তখন মানুষের কাপড়ের চাহিদা বাড়বে, তখন হয়ত বাজারে শীতের কাপড়ের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। আবার বড় কাপড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও আছে।
কালিপুর বাজার এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা যায় অনেকেই চলতি পথে শীতের কাপড় নেড়েচেড়ে দেখেন। টুকটাক বিক্রিও হয়। তবে মার্কেটগুলোতে তেমন বিক্রি নেই বলে ক্রেতারা জানালেন। মতলব বাজারের একটি কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, শীতের কাপড় তো উঠাইছি, বিক্রি নেই। খুব অল্প-স্বল্প কাস্টসার শীতের কাপড় কিনছেন। শীত বাড়লে তখন বিক্রি হবে, আমাদের কাছে ভালো কালেকশন আছে।
ছেংগারচর কলেজ মার্কেটের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন জানান, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন মার্কেট প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল। গত দু-তিন দিন ধরে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার ও শাল কিনতে ক্রেতারা আসছেন। বেচা-কেনাও বেশ ভালো।
Development by: webnewsdesign.com