রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০টি গাছ কেটে ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ১৫টি গাছ কাটাও হয়ে গেছে। গাছগুলোর বেশিরভাগই অর্ধ শতবর্ষীর বেশি পুরনো।
এদিকে গাছ কাটার প্রতিবাদে রুয়েটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। সেসময় তারা বলেন, রাজশাহীতে একের পর এক সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে।
যেই গাছগুলোর বয়স নূন্যতম ৫০ বছর। এতে পরিবেশের ভারমাস্য নষ্ট হবার পাশাপাশি অনেক প্রাণীর আবাসস্থলও ধ্বংস হচ্ছে। গাছ কেটে ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে রুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহ্ববান জানান তারা।
এদিকে রুয়ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নতুন প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণের জায়গা তৈরি করতে এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে। যারা গাছ কিনেছেন, তারা কাটছেন।
এবিয়ে, রাজশাহী বিভাগীয়বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়মুর রহমান বলেন, ‘সরকারি গাছ কাটার জন্য কর্তৃপক্ষের বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নেওয়া উচিত এবং বন বিভাগের উচিত গাছের দাম মূল্যায় করা।’
তিনি দাবি করেন, রয়েট কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগকেও অবহিত করা হয়েছে।
য়েয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আশির দশক থেকে ক্যাম্পাসে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি। সস্প্রতি সরকার ছয়শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। যার আওতায় আছে ১০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ, এজন্য মোট ৫০টি গাছ কাটা হবে। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচির আওতায় ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে।’
রেজিস্টার আরও বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অফিস এবং রুয়েটের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার তদারকি করছে।’
যোগাযোগ করা হলে সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়র অমিত রায় চৌধুরী এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক জগলুল সাদাত জানান, তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারবেন না।
ক্যাম্পাসের সিনিয়র সহকারী নিরাপত্তা পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘যথাযথ ক্রয় বিধি মেনে রুয়েটের কর্মচারী গোলাম মোস্তফার কাছে ১৫টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে।’
গাছের ক্রেতা গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি গাছ কাটার জন্য প্রমিক নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, রুয়েট কর্তৃপক্ষ বন বিভাগকে গাছ কাটার বিষয়ে অবহিত করেছিল কিনা তা তিনি জানেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত অন্তত ১৫টি কৃষ্ণচূড়া ও মিনজিরি গাছ কাটা হয়েছে। শ্রমিকরা একের পর এক গাছ কাটছে এবং কাঠের গুঁড়ি রিকশা-ভ্যানে করে ক্যাম্পাস থেকে বের করা হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে পুরনো গাছ কাটা ফেললে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেসব গাছ কাটা হয়েছে এবং কাটার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে- আম, লিচু, মেহগনি, কড়ই, মিনজিরি এবং কৃষ্ণচূড়ে।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই গাছগুলোর অধিকাংশই রুয়ে়েট ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছিল। প্রতিটি গাছের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা হলেও রুয়েট কর্তৃপক্ষ ১৫টি গাছ মাত্র ১.২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গাছ লাগালে পুরনো গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুয়েট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুরনো এবং বড় গাছ থাকা গর্বের। মানুষের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়াও এসব গাছ বিভিন্ন ধরণের পাখির বাসস্থান।’
পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব টুংকু জানান, আমরা লক্ষ্য করছি রাজশাহীতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই এই উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজন আছে কিনা। তবে আমরা নিশ্চিত পুরনো গাছগুলো খুবই প্রয়োজন, যেগুলো কাটা হচ্ছে।’ ‘কর্তৃপক্ষের উচিত গাছগুলি বাঁচিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা,’ যোগ করেন তিনি।
Development by: webnewsdesign.com