কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৯:৩৬ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে
apps

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর দুধকুমার, ফুলকুমার, কালজানী, সংকোশ, গঙ্গাধরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুধকুমার ও কালজানী নদের ভাঙ্গন। ফলে ছোট হচ্ছে ভূরুঙ্গামারীর মানচিত্র।

দুধকুমার ও কালজানী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে শিলখুড়ী ইউনিয়নের উত্তর তিলাই, উত্তর ধলডাঙ্গা, দক্ষিণ ধলডাঙ্গা, শালঝোড়, তিলাই ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ি, দক্ষিণ ছাট গোপালপুর, শালমারা, ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নলেয়া, চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা, ও বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের গনাইর কুটি গ্রাম বিলীনের পথে। হুমকির মধ্যে পড়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বীরমুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক মরহুম শামসুল হক চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নামে দেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, গনাইরকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরের মানুষজন।

দুধকুমার নদী ভাঙ্গনে ইসলামপুর গ্রামের দুই শতাধিক বসতবাড়ি, শতশত বিঘা ফসলি জমি ও ১টি মসজিদও দুটি কবর স্থান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো চার শতাধিক পরিবার, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি আশ্রয় কেন্দ্র সহ বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই গ্রাম দু’টি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙ্গন রোধে নিয়মিত নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ।

দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে পাইকেরছড়া ইউনিয়নের দুটি গ্রামোর দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, কয়েকশো বিঘা ফসলি জমি, গাছ ও বাঁশ বাগান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে দক্ষিণ চর ভূরুঙ্গামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল করিম ১৫শ নামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

নদী ভাঙ্গনের শিকার ইসলামপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন, আব্দুল হালিম ও সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ক্ষোভের সাথে জানান, ‘বসত ভিটা সহ সব জমি নদীর পেটে চলে গেছে, এখন তাঁদের মাথা গোঁজার জায়গা নেই। প্রতিবছর বন্যায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এসে দেখে যান কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেন না। নদী শাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জোড় দাবী জানান তারা।

পাইকডাঙ্গা গ্রামের আমির হোসেন, আব্দুস ছালাম, জহির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম জানান, ‘নদী ভাঙ্গনে পাইকডাঙ্গার প্রায় তিনশো বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।’ ইউপি সদস্য কাবিল উদ্দিন জানান, ‘নদী ভাঙ্গনে পাইকডাঙ্গার প্রায় ৬০টি বাসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া দুইটি মসজিদ, একটি ঈদ গাঁ মাঠ নদী গিলে খেয়েছে। বর্তমানে আরো ২৫০টি পরিবার, দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি আশ্রয় কেন্দ্র হুমকির মধ্যে রয়েছে।’

অপর দিকে চলতি বছরের তৃতীয় বন্যায় ভয়াবহ ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, গনাইরকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, চৌধুরী বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম।

ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি ইউনিয়নের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত কাঁচা সড়ক। স্রোতের তোড়ে ভাঙ্গছে দু’টি ব্রীজ। প্রায় বিলীন হবার পথে সদ্য নির্মিত ১ কিঃমিঃ পাকা সড়ক। যে সড়ক দিয়ে চলাচল করে দুধকুমর নদের পূর্ব পাড়ের ৩টি ইউনিয়নের জনগন।

গনাইর কুটি গ্রামের জহির ইসলাম ,বাবু , করিম ও আয়নাল জানান, দুধকুমার নদীর পানি কূল উপচিয়ে ইউটার্ণ নিয়ে পিছনের দিকে একটি সোতা নদী বেড়িয়ে এসেছে। যেটাতে তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড় হতে না পাড়ায় দকূল ভেঙ্গে চৌধুরী বাজারের মাত্র একশ গজ কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোন সময় বাজার ,মসজিদ , কবর স্থান ও বিদ্যালয় দুটি বিলীন হয়ে যেতে পারে নতুন এই সোতা নদীর গর্ভে। তারা দ্রূত একটি কার্যকর বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।

উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও দুধকুমার নদ ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা জানান, ‘জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব গত বছর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদী ভাঙ্গন রোধে সাড়ে সাতশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। যাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেছে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী (খোকন )জানান, “আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছি, চলমান নদী ভাঙ্গন রোধ করার। ইতিমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ডে তাগিদ দিয়েছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার”।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদী ভিত্তিক পরিকল্পনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জেলাকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। দুধকুমার নদীর ২৫কিলোমিটার সংস্কার ও বাঁধ নির্মাণে ৭ শ ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com