কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখলের ঘটনায় ১০/১২জন অজ্ঞাত সহ ১৮ জনের নামে কুষ্টিয়া সদর থানায় মামলা করেন প্রতারণার শিকার জমির মালিক এমএম ওয়াদুদ। ভুয়া পরিচয় পত্র জালিয়াতি করা ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ৭৭ লক্ষ টাকায় ক্রয় করলেন মোহাম্মদ আলীর ছেলে কুষ্টিয়া বড় বাজারের বেঙ্গল টাইলস এন্ড সেনেটারীর মালিক মহিবুল ইসলাম।
১৮ জনের মধ্যে ক্রেতা মহিবুলের নামে মামলা দায়ের হলে তিনি এখন পলাতক রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করলেও তা নাকচ হয়ে যায়। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে এই মহিবুল এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে? তিনি একটির পর একটি জমি ক্রয় করে একটির পর একটি নির্মাণ করে যাচ্ছেন আলিশান বাড়ি। কুষ্টিয়া হরিপুরে তৈরি করেছেন ৬ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি, গোরস্থান পাড়ায় ঈদগাহের পাশে পাঁচতলা আলিশান বাড়ি, বড় বাজারে তৈরি করেছেন বিশালাকৃতির দুইটি বাড়ি ও রক্সি গলির মাথায় তৈরি করেছেন শাহজালাল মার্কেট ও বড় বাজারের মধ্যে রয়েছে সাত থেকে আটটি দোকান, উক্ত দোকানগুলো ভাড়া দেয়া রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়ার স্থানীয় হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা জানান যে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকেও এত জায়গা জমি বাড়ি-গাড়ি করতে পারি নাই, অথচ এই মহিবুল এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে একাধিক জমি ও বাড়ির মালিক হলেন। তারা এটাও বলেন নিশ্চয় তার অবৈধ কোন ব্যবসা আছে তা দিয়ে তিনি একটির পর একটি জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ করে যাচ্ছেন। তারা এটাও বলেন ওই জমি জালিয়াতি চক্রের সাথে সে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে স্বল্প মূল্যে এসকল জমিগুলো ক্রয় করছেন। সম্প্রতি যে জমিটি ক্রয় করেছেন তারই এক বন্ধু মহিবুল এর নামে অথচ এই মহিবুল রাজা মেটালে কাজ করে, মূলত রাজা মেটালের মালিক এই প্রতারক মহিবুল ইসলাম।
ইতিমধ্যে জমি জালিয়াতি চক্রের সুজনসহ ৬ জনকে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। এ চক্রের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনায় এখনো অনেকেই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে এআইডি জালিয়াতির প্রক্রিয়া শুরু করে এই চক্রটি। কুষ্টিয়া পেয়ারাতলার রিমন এন্টারপ্রাইজ অফিসে বসেই বাবু, মিলন মেম্বর, মিন্টু, মহিবুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন সহ অজ্ঞাত কয়েকজনের উপস্থিতিতেই শুরু হয় এআইডি জালিয়াতির কাজ। এখানে বসেই সিন্ধান্ত নেওয়া হয় এআইডি জালিয়াতিতে পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফর উদ্দিনের যোগসাজশে তা ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালের এর সাথে যুক্ত হয় তৎকালীন জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রিমন এন্টারপ্রাইজে এনআইডি জালিয়াতির প্রক্রিয়া চলাকালীন তিন থেকে চার দিন সন্ধ্যার পরে উপস্থিত ছিলেন এই নির্বাচনী কর্মকর্তা। এমনকি তার বিশেষ ক্ষমতায় গ্রহন করা হয় জালিয়াতি চক্রের ভোটার আবেদন ফরম। যদিও তিনি দায় এড়িঁয়ে যাচ্ছেন এই জালিয়াতির ঘটনার। তার ভাষ্যমতে, তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব থাকে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার, সে শুধু স্বাক্ষর করেছে।
এনআইডি জালিয়াতির চক্রের ভোটার আবেদন ফরমের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ছামিউল আলম। এ বিষয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা ছামিউল আলম দায়সারা বক্তব্য প্রদান করেন প্রতিবেদক এর কাছে। তিনি বলেন, ফরম পূরন ঠিক আছে কি না দেখেই স্বাক্ষর করেছি। তার ভাষ্যমতে, সঠিকভাবে ভোটার আবেদন ফরম যাচাইয়ের সুযোগ কম।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচনী অফিস থেকে এনআইডি কার্ড হাতে পায় চত্রটি। শুরু হয় কুষ্টিয়ায় শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখলের প্রক্রিয়া। এমনকি জালিয়াতি জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রয়ও করা হয়। আর এই ছক কঁষা হয় কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের মিলন মেম্বরের বাড়িতে। জমি দখল প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা হয় সদ্য বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা সুজন, জমির ক্রেতা মহিবুল ইসলামসহ সম্পদশালী ও ক্ষমতাধর অনেককেই।
স্থানীয়রা বলছেন, সুজন সরকারের এক মন্ত্রীর মেয়ের জামাই পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন অনেকের সাথে। এমনকি জেলা যুবলীগের নেতাও তার প্রতারনার শিকার। কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন,’ সে অনেক নেতাকর্মীদের অনেকের কাছ থেকেই পাঁচ দশ লাখ টাকা নিয়েছে। তবে পরবর্তিতে চোখ উল্টে দিতে দ্বিধা বোধ করে না।’
এর মধ্যেই বাঁধসাধে সংবাদ মাধ্যম। মুখোশ উন্মোচিত হয় জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে শতকোটি টাকার দখলকারী চক্রটির। শুরু হয় তোলপাঁড়, নঁড়েচঁড়ে বসে প্রশাসন। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের তদন্তে একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে জমি দখল ও জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িতদের নাম। জালিয়াতি চক্রের শেঁকড় উপড়ে ফেলতে কঠোর ভুমিকা পালন করে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত (পিপিএম)বার। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি ও সম্পত্তি দখলের সাথে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।
Development by: webnewsdesign.com