সাহসী সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথের জীবনভিত্তিক নাটক ‘এডিটর মহাশয়’ আবারো মঞ্চস্থ হলো কুষ্টিয়া শিল্পকলায়। দর্শকরা আবার সেই ১৬০ বছর আগে কুষ্টিয়ার কিংবদন্তি সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ফকির লালন সাঁই, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। খ্যাতিমান নাট্যকার মাসুম রেজার নির্দেশনায় বোধন থিয়েটার নাটকটি মঙ্গলবার রাতে মঞ্চস্থ করে কুষ্টিয়া শিল্পকলার আধুনিক মঞ্চে।
বৃটিশ সরকার ও জমিদারের প্রজাবঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার পথিকৃত কাঙাল হরিনাথের সংগ্রাম ও সাহসিকতা নিয়ে রচিত নাটক এডিটর মহাশয়। নাটকটি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল গত বছরের ১৪ই অক্টোবর। সেবারের মতো এবারো ২৮ মে রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হলভর্তি দর্শক বুদ হয়ে উপভোগ করেছে নাটকটি।
নাটকের পটভূমিতে তুলে আনা হয়েছে ১৬০ বছর আগে কাঙাল হরিনাথ কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে যে পত্রিকা বের করতেন সেই সময়ের সাহসিকতার গল্প। সেমসময় জমিদার ও ইংরেজদের প্রজাপীড়ন এবং নির্যাতনের চিত্র পত্রিকায় লিখেছেন কাঙাল। দারিদ্রতা ও মৃত্যু ভয় তাকে এতটুকুও সরাতে পারেনি সত্যপ্রকাশ থেকে। নাটকে দেখানো হয়েছে তোষামোদী না করে কিভাবে বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। কাঙাল হরিনাথ স্কুল খুলে প্রথমে সেই সময়ে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন। গানের দল গঠন করে সমাজ সংস্কার করেছেন। ১৮৭২ সালে পাবনা-সিরাজগঞ্জে যে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে জমিদারগণ তার দায় চাপিয়েছেন গ্রামবার্তা প্রকাশিকার ওপর। সেসময় দফায় দফায় হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এডিটর কাঙাল হরিনাথকে। কিন্তু কাঙাল উচ্চারণ করেছেন, জমিদার যদি তার ছোবল সংকুচিত না করেন, আর প্রজাদের যত্ন না নেন তাহলে আমার পত্রিকা নীরব থাকবে না। এসব কাহিনীতে কাঙালকে শুধু এডিটর নয় জনমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
নাটক দেখতে আসেন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন- অসাধারণ একটি পরিবেশনা, আমি অভিভ’ত হয়েছি। নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, বোধন থিয়েটার সুযোগ দিয়েছে বলে আমি এ কাজটি করতে পেরেছি। দর্শকরা যে সাড়া দিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ। আরো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পেলাম।
নাটকের মূল চরিত্র কাঙাল হরিনাথ হিসেবে অভিনয় করা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনোয়ার বাবু বলেন- এটি শুধু নাটক নয়, সমাজকে ঝাকুনি দেওয়ারও চেষ্টা। নাটকটি এখনকার সময়ের জন্য চরমভাবে প্রাসঙ্গিক- আড়াই দুই ঘণ্টা বুদ হয়ে থাকা দর্শকরা বলছেন সেই কথাই। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার মুর্শেদ বলেন, চাটুকারিতা, পশ্চাতপদতা মানুষকে যখন পিছিয়ে নিয়ে গেছে তখন কাঙাল সমাজ জাগরণে এগিয়ে এসেছে। এটি সাহসী পরিবেশনা।
পরিবেশনা দেখেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজাসহ সর্বস্তরের সূধীজনরা। এই নাটকের মধ্যদিয়ে থিয়েটারে সুদিন ফেরার আশা করছেন কুষ্টিয়া শিল্পকলার সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম।
Development by: webnewsdesign.com