অফিসিয়াল কোনো কাজ বা দিনভর অফিস না করলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. শহীদ উল্লাহকে প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে মাস শেষে ৪০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা পৌরসভা থেকে বিনা পরিশ্রমে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সর্বমোট ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বেতন নিয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম ৫ মাসের বেতন হিসেবে একত্রে ২ লক্ষ টাকা দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দপ্তরের কাগজপত্রে তিনি কর্মরত থাকলেও তাকে তেমন একটা দেখেন না পৌরবাসী।
প্রশ্ন উঠেছে, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ছাড়া কীভাবে আর্থিক হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন হয়, কার স্বাক্ষরেই এ সব লেনদেন হয়। বিনা পরিশ্রমে ৯ মাসে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে পৌরসভার কী লাভ হয়েছে। আর এমন অনিয়ম জেনে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন পৌরবাসীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অফিস কক্ষ না থাকার কারণে উপস্থিতির স্বাক্ষর বইয়ে স্বাক্ষর করেই হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে পৌরসভা কার্যালয় ত্যাগ করতে হয়। অফিস কক্ষ না থাকায় তিনি অফিস করতে না পারলেও পৌরসভা কার্যালয়ের ৭ নং রুমে বসে অফিস করেন বিদ্যুৎ লাইনম্যান মনোয়ার হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, পৌরসভার উন্নয়ন না হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে পৌরসভার প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর। ঘুষ, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে পৌরসভা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছর জানুয়ারিতে এ পৌরসভায় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা পদে যোগদান করার জন্য নীলফামারী থেকে আসি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে যোগদানপত্র গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে বারবার ঘোরাতে ঘোরাতে অবশেষে মার্চ মাসে যোগদানপত্র গ্রহণ করেন। এরপর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই কেটে যাচ্ছে দিন, সপ্তাহ, মাসের পর মাস।
তিনি বলেন, যোগদানপত্র গ্রহণ করলেও পৌরসভায় বসার কোন সুযোগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। শুধু স্বাক্ষর করেই চলে যেতে হয় আমাকে। এরপর ৫ মাসের বেতন একত্রে ২ লক্ষ টাকা আমার হিসাবে জমা হয়। তারপর থেকে স্বাক্ষর করেই বেতন দিচ্ছে পৌরসভা। বিনা পরিশ্রমে পৌরসভা যদি বেতন দেয় তাহলে আমার ক্ষতি কী। কেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আমাকে বসায় বসায় বেতন দেয় সেটা আমার জানা নেই। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সেটা ভালো বলতে পারবে।
পৌরসভার সচিব বিপ্লব চন্দ্র মুহরীর কাছে পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আছেন কিনা এবং তিনি কত নাম্বার রুমে বসেন তা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আছেন। তবে বাকি সব পৌর প্রশাসক মহোদয় বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, পৌরসভায় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আছেন। তবে কাজ নেই। বসার জায়গা নেই তাই স্বাক্ষরেই বেতন দিচ্ছি। শুধু তাই নয় সেই কর্মকর্তাকে দুর্নীতির কারণে এ পৌরসভা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। তারপর সে আবারও ঘুরে ফিরে এ পৌরসভায় যোগদান করে। তাকে প্রত্যাহার করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে কোন শোকজ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
Development by: webnewsdesign.com