রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। আর এই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে এক রকম চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ার কারনে এই জেলার করোনা রোগীর সংখ্যা বেশী ।
এই জেলার ভারতীয় করোনা রোগের উপসংর্গ দেখা দেওয়ায় মানুষের মনে আতংক বেড়েছে। প্রতিদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে করোনা রোগে ও উপসর্গ নিয়ে রোগী মারা যাচ্ছে। এসব রোগীর প্রায় প্রত্যেককে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ওয়ার্ড গুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু আছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সর বরাহ না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ রোগী শাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ফলে দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। তবে যেসব রোগীরা বেড সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের জন অতিরিক্ত ৪৭৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড গুলোতে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে। পাশাপাশি শাসকষ্ট নিয়ে আসা অন্য রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।
করোনা ও উপসর্গ রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সরিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অন্তত ১১টি ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ড গুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু আছে। করোনা রোগীদের জন্য ২৭১টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ বেড চালু আছে। তবে এখন সবগুলো বেডেই রোগী রয়েছে। রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন অক্সিজেন চাহিদা রয়েছে ৭ হাজার লিটার। সাধারণ সময়ে চাহিদা হতো মাত্র দেড় হাজার লিটার। এদিকে রামেক হাসপাতালে অক্সিজেন চালু আছে বেডের সাথে যুক্ত। তাদের অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যারা বেডের বাইরে এসে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।
১৮ দিন যাবত করোনা আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন এক রোগীর সন্তান ব্যাংক কর্মকর্তা বরকাতুন নেসা জানান, প্রথমে আমার পিতা কে নিয়ে রামেক হাসপাতালের ২২ নং ওয়ার্ডে ভর্তি হই। তবে সেখানকার ওয়ার্ডের ডাক্তার ও নার্সদের নিকট হতে রোগীদের আশানুরুপ সেবা পাওয়া যায়নি। সেখানকার নার্সরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। রোগীদের কোন সুযোগ সুবিধার কথা শোনে না। অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে বেডের সাথে যে অক্সিজেন আছে না সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বেডের বাইরে যারা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের সেন্ট্রার সিস্টেমে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে এসব রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে বলে জানান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, হাসপাতালে করোনা রোগী বেড়ে যাওযায় পর্যাপ্ত জনবল সংকট হওয়ার কারনে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছে না। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময় পাচ্ছে না। অতিরিক্ত ডিউটি করে রোগীদের সেবা দেবার চেষ্টা অব্যহত আছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের গত ১৬ দিনে মারা গেলেন ১৬১ জন। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রোগির চাপ বাড়ায় মঙ্গলবার এ হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ২টি আইসিইউসহ ৩৮ বেড। এছাড়াও আরও ১৫ জন চিকিৎসক পাঠাতে স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর সপ্তাহ খানেক আগে ১৫ জন চিকিৎসককে পেশনে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২০টি আইসিইউসহ ৩০৯ বেডের বিপরিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৪৪ জন। বাকিদের মেঝেসহ অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় এখানে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮, নাটোরের ৭, নওগাঁর ৪, পাবনা ও কুষ্টিয়ার ১ জন করে। একই সময় সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৩ জন।
তিনি বলেন, মৃতদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরে মধ্যে তিনজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন ও ৬১ বছর বয়সের উপরের ২ জন।
শামীম ইয়াজদানী জানান, রোগির চাপ বাড়ায় মঙ্গলবার এ হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ২টি আইসিইউসহ ৩৮ বেড। এছাড়াও আরও ১৫ জন চিকিৎসক পাঠাতে স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর সপ্তাহ খানেক আগে ১৫ জন চিকিৎসককে পেশনে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল
বেড ও অক্সিজেন সংকটের বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস বলেন, করোনা রোগীর সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় বেডের সংকট আছে। তবে বেডের সাথে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে যেসব রোগীরা ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের জন্য ৪৭৫টি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রেখে অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
করোনা রোগীদের আরো উন্নত সেবা নিশ্চিত ও বেশী রোগীর চিকিৎসা দিতে রাজশাহী সদর হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসা সেবা চালু হলে কিছুটা সংকট কাটিয়ে উঠা যাবে বলে মনে করেন।
Development by: webnewsdesign.com