আজ পঁচিশে বৈশাখ।
বাঙালির আত্মমননের চিরদিশারী,
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ। বাঙালির জীবনের বাঁকে বাঁকে আনন্দ-বেদনা প্রকাশে বারবার সহায় হয়েছেন বিশ^বরেণ্য এই কবি। কবিগুরুর জন্মতিথিতে রাজধানী ঢাকাসহ তার স্মৃতিধন্য শিলাইদহ, পতিসর ও দক্ষিণডিহিতে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। এছাড়া শাহজাদপুরে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা, কবিতা, গান ও গীতি নৃত্যনাট্য। বিটিভিসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও বেতারেও সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
বাংলা ১২৬৮ সালের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মেছিলেন শিল্প-সাহিত্যের দেবশিশু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অসামান্য সৃজনশীলতা ও অমর সৃষ্টি দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে গর্বের সাথে তুলে ধরেছেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রতিভার প্রকাশ ঘটে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি কাহিনী’তে। গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক গ-ির বাইরে থেকেও গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও অসংখ্য গানের মাধ্যমে অনন্য এক উচ্চতায় আসীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সৃষ্টিতে ধারণ করেছিলেন অনাগত কালও। তাই তো তার সব সৃষ্টিকর্মই এখনো সমান আবেদন নিয়ে মুগ্ধ করছে অনুরাগীদের।
মধ্যযুগীয় ঔপনিবেশিক সাহিত্যের বেড়াজাল থেকে বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতায় মুক্তি দিয়েছিলেন কবিগুরু। সব ক্ষেত্রেই স্পষ্ট উচ্চারণ বারবার ধ্বনিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সৃষ্টিকর্মে। সত্য, সুন্দর ও প্রেমের সাধনা হয়ে ওঠে তার সমগ্র কাব্যসাহিত্যের প্রয়াস। আধুনিকতা ও উৎকর্ষে মানুষ অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেলেও আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে এখনো ফিরে আসতে হয় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিসম্ভারে। বাঙালির চিন্তা-মনন-অনুভূতির এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া পড়েনি। আজও তার সৃষ্টি ভাবনার বীজ বুনে
দেয় শিল্প ও সাহিত্য অনুরাগীর হৃদয়ের গহিনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বৈশি^ক সভায় তুলে ধরেছেন মহান এই কবি। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগন্থের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পান রবীন্দ্রনাথ। আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের অত্যাচার এবং নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ত্যাগ করেন ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনে জর্জরিত উপমহাদেশের মানুষের মনে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছেন লেখনী দিয়ে। সমগ্র জীবনে অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ, গান, নাটক আর উপন্যাস রচনা করেন। জীবন সায়াহ্নে, সত্তর বছর বয়সে শুরু করেন ছবি আঁকা। দুই হাজারের মতো ছবিও এঁকেছেন তিনি। এঁকেই তিনি নানা রূপে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার বহুমাত্রিক সৃজনকর্মে। আমাদের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টাও রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার ও চিত্রশিল্পী। বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ (ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট) বাদলঝরা দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন কবিগুরু।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি ও অডিটোরিয়ামসহ কাছারিবাড়ির আঙিনা বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে; প্রবেশপথ জুড়ে আঁকা হয়েছে আলপনা। আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ। সকাল ১০টায় উদ্বোধনী পর্বে রয়েছে আলোচনাসভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলার সংসদ সদস্যবৃন্দ ছাড়াও থাকবেন রবীন্দ্র বিশ্বাবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজম, সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-ল প্রমুখ। বিকাল ৩টায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগামীকাল দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টায় ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন ও বাস্তবতা; রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং বিকাল ৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সমাপনী দিনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
Development by: webnewsdesign.com