ইউক্রেনকে বিপাকে ফেলে ‘পিছটান’ দিচ্ছে আমেরিকা?

বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩ | ২:১৬ অপরাহ্ণ

ইউক্রেনকে বিপাকে ফেলে ‘পিছটান’ দিচ্ছে আমেরিকা?
ইউক্রেনকে বিপাকে ফেলে ‘পিছটান’ দিচ্ছে আমেরিকা?
apps

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে দু’দেশের সেনাদের মধ্যে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। কখনও যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে, কখনও কমেছে। তবে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের শুরু থেকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্যও করে আসছিল। কিন্তু জার্মানির সঙ্গে জোট বেঁধে সেই আমেরিকাই নাকি এবার ইউক্রেনকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার কথা বলছে! তেমনটাই উঠে এসেছে জার্মানির এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।

জার্মানির ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘যুদ্ধের ক্লান্তি’ এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কিয়েভকে সমর্থন করা ন্যাটো দেশগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। আর সেই কারণেই আমেরিকা এবং জার্মানি জেলেনস্কি সরকারকে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। জার্মানির ট্যাবলয়েড ‘বিআইএলডি’-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্চ মাসে রুজভেল্ট কক্ষে বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।

সেই বৈঠকের সময় বাইডেন এবং ওলাফ— উভয়েই নাকি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার জন্যও নাকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপর পরোক্ষভাবে চাপ দিতে সম্মত হয়েছিলেন তারা।

কিয়েভ-মস্কোর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য প্রদানকারী দু’টি প্রধান শক্তি ছিল আমেরিকা এবং জার্মানি। কিন্তু সেই অস্ত্র সরবরাহের হিসাব নাকি বদলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ‘বিআইএলডি’ জানিয়েছে, দুই মহাশক্তিধরই এখন শুধুমাত্র ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ’ অস্ত্র সরবরাহ করতে চায় ইউক্রেনকে। যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য যাতে পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে, সেই অবকাশ রাখতেও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে বেশি অস্ত্র তুলে দিতে রাজি নয় আমেরিকা এবং জার্মানি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, জার্মানির ফেডারেল সরকার এখন ইউক্রেনকে ‘আলোচনার জন্য কৌশলগতভাবে ভাল অবস্থানে’ রাখার লক্ষ্য নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারি সূত্র জার্মানির ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, “ইউক্রেনের উচিত ‘সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসা। হোয়াইট হাউস এবং চ্যান্সেলার বিষয়টি দেখছেন।”

জার্মান সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “জেলেনস্কির বোঝা উচিত যে, এভাবে সব কিছু চলতে পারে না।”

বার্লিন এবং ওয়াশিংটন মনে করছে, কিয়েভ এবং মস্কো যদি আলোচনায় বসতে রাজি না হয়, তা হলে দুই দেশের মধ্যে সমস্যার কোনও সমাধান হবে না। দুই সরকারের মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তিও হবে না। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় বসাতে ব্যর্থ হলে ‘প্ল্যান বি’-ও রয়েছে আমেরিকা এবং জার্মানির হাতে।

জার্মানি সংবাদমাধ্যমে সূত্র বলেছে, “দু’দেশের (রাশিয়া এবং ইউক্রেন)-এর মধ্যে শান্তি আলোচনা সম্ভব না হলে বিকল্প হিসেবে কোনও চুক্তি ছাড়াই সংঘাত থামাতে চাইছে বার্লিন এবং ওয়াশিংটন।”

এর অর্থ হল- শান্তি আলোচনা বাস্তবায়িত না হলেও ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি নতুন সীমানা টানতে চাইছে আমেরিকা এবং জার্মানি। হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের মতে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ করে নেয় রাশিয়া। এছাড়াও ইউক্রেনের প্রায় ১৭.৫ শতাংশ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়ার দাবি, সেই জমি তাদের দেশেরই অংশ। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য পোস্ট, কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট

Development by: webnewsdesign.com