ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বানভাসি মানুষ বিধ্বস্ত ঘরে ফিরতে শুরু করেছে । ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়েছে শত শত মানুষ। বাড়িতে ফিরলেও দুর্ভোগ কমেনি তাদের। বন্যায় বিধ্বস্ত বাড়ি মেরামতের পাশাপাশি খাদ্যের সন্ধান করতে হচ্ছে।পানি বন্দি বাসিন্দারা এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘর থেকে বের হলে ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। হাওর পাড়ের দুর্গতরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। এর সঙ্গে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
গত ১৭ জুন থেকে উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এক মাসের অধিক সময় ধরে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়া দুর্গত প্রায় ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখাগেছে, আশ্রয় কেন্দ্র গুলো থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। কিন্তু তাদের বসত ঘরে এখনো রান্না করে খাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ফলে ত্রাণের ওপরই তাদের ভরসা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে তাদের সংকট দিন দিন বাড়ছে। শিশুখাদ্য অনেকেই জোগাড় করতে পারছেন না। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
দাসের বাজার ইউনিয়নের শংকর পুর গ্রামের জয়নাল আহমদ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরেছেন। ঘরের দরজা খুলতেই ছুটে পড়ে বেড়া। তাই বাঁশের টেল দিয়ে রেখেছেন ঘর। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে এসে বড় বিপদে আছি। রান্না করার চুলাসহ ঘরের বেড়া বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থেকে নষ্ট হয়েগেছে। ঘরে নেই খাবার। ঘর টিক করব না খাবার জুগাড় করবো।
নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কান্দি গ্রামের রিকশা চালক ফয়জুল হকের স্ত্রী সাহেনা বেগম জানান ,বাশেঁর বেড়ার ঘর বন্যার তোড়ে ভেঙে গেছে। এক মাস ধরে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি বানিয়ে ৫ সন্তান নিয়ে ছিলাম। পানি কমেছে। বাড়িতে ফিরে ঘরের অবস্থা দেখে ভয় হচ্ছে। খুটি আর ভেড়া কখন জানি পড়েযায়। সন্তানদের খাবার জুগাড় করবো না ঘর টিক করব।
দাসের বাজার ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের শুসেন দাসের স্ত্রী সাবিত্রী দাস জানান, বন্যার পানি প্রবেশ করে ঘরের ভিতরে হাঁটু পানি ছিল। সংসারের মায়া ত্যাগ করে ২ সন্তান ও স্বামীসহ অন্যর বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। ঘর থেকে পানি নেমে যাওয়া বাড়িতে এসেছি। ঘরের বেড়াসহ চুলা নষ্ট হয়েগেছে। চাল ও ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। ঘরে থাকতে ভয় হচ্ছে কখন জানি সাপ বিচ্চু ঢুকে পড়ে। স্বামী অসুস্থ রোজগার করতে পারেন না। এখন কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। ঘরে খাবারও নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বন্যার শুরুথেকে আশ্রয় কেন্দ্র ও দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি ভাবে আশ্রয়কেন্দ্র ও পানিবন্দি পরিবারে রান্না করা খাবার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও গো খাদ্য বিতরণ করাহয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বানভাসিরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। বন্যার কারণে যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য আলাদা টিম ঘটন করা হয়েছে। ত্রাণের কাজ শেষ হওয়ার পর পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।