সিলেটের রাজপথে ইসলামী আন্দোলনের সাহসী নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আলহাজ সৈয়দ আতাউর রহমান আর নেই। গতকাল শনিবার সকাল ৭ টায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র, ৪ কন্যা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল শনিবার বাদ আসর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহ শামসুদ্দিন (রহ.)-এর দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছেলে কবি ও গবেষক সৈয়দ মবনু।
আলহাজ সৈয়দ আতাউর রহমান ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (র.)-এর খলিফা মাওলানা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী (র.) এবং দরগাহে হযরত শাহজালালের ইমাম মাওলানা আকবর আলী (র.)-এর শিষ্য। তিনি সিলেটের দরগাহ, কাজির বাজার, রানাপিং, ভার্থখলা সহ বহু মাদরাসার মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন।
মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (র.) ও মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে তিনি ইসলামি আন্দোলনে সক্রিয় হন। এরপর শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বে খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও অধ্যক্ষ ইসহাকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ছিলেন। আলহাজ আতাউর রহমান নব্বইয়ের দশকে সিলেটে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনে একশন কমিটি ফর বাংলাদেশ লিবারেশন মুভমেন্টের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ও তাঁর বড়ভাই সৈয়দ আব্দুর রহমান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গোটা ব্রিটেন সফর করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি ও অর্থ সংগ্রহ করেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জেনেভা থেকে ব্যারিস্টার নিয়োগ দিতে তারা চাঁদা তুলে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামের সেক্রেটারী রেজাউর রহমানের কাছে ১৬শ’ পাউন্ড দেন। এই টাকা দিয়েই বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য জেনেভা থেকে প্রথম ব্যারিস্টার নিয়োগ করা হয়। এরপর তাঁর বড়ভাই সৈয়দ আব্দুর রহমান সরাসরি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে ৫০৪ পাউন্ডের একটি চেক দেন, যা তৎকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। তার অপর ভাই সৈয়দ আব্দুল হান্নান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা।
গতকাল সকালে সৈয়দ আতাউর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজন ও আলেম উলামা মরহুমের বাসায় ছুটে আসেন। এ সময় দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, ভার্থখলা মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা রেজাউল করিম জালালী, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, আম্বরখানা গালস্্ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মহাদ্দিস আহমদ, সুনামগঞ্জ সমিতির উপদেষ্টা আলহাজ্ব আবুল বশর, সুনামগঞ্জ সমিতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো: আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, সিটি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদসহ অসংখ্য মানুষ উপস্থিত হন। বাদ আসর বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, সৈয়দপুর মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ ফখরুল ইসলাম, সিলেট ল’ কলেজের অধ্যক্ষ এডভোকেট সৈয়দ মহসিন আহমদ, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আখলাক আহমদ, সৈয়দপুর শামসিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. রেজওয়ান আহমদ, ইকরা বাংলাদেশ আল মাদানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা রশিদ আহমদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সৈয়দ আতাউর রহমানের মৃত্যুতে সিলেটবাসী ইসলামি আন্দোলনের একজন অভিভাবক ও সিপাহসালারকে হারালো। এ শূন্যতা পুরণ হবার নয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, কেন্দ্রীয় অফিস ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডাঃ এ এ তাওসিফ, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আহমদ বেলাল, বরুণার পীরের সাহেবজাদা মাওলানা আবদুর রহমান আসজাদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মঈন উদ্দিন, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা সহসভাপতি মাওলানা সামসুদ্দিন ইলিয়াস, সিলেট মহানগরী সহসভাপতি আবদুল হান্নান তপাদার, মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, সুনামগঞ্জ জেলা সহসভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন মোহন, সিলেট জেলা খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেহাল আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফজর আলী, মরহুমের ছেলে সৈয়দ ফখনু, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহীন, খেলাফত মজলিস নেতা হাফেজ মাওলানা মনজুরে মাওলা, মাওলানা মুহিবুর রহমান শিপলু, মাওলানা রিয়াদ আল আসাদ, মাওলানা হাফিজ এনামুল হাসানসহ বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম ও মুসল্লিগণ।
জানাজা ও দাফনের পর বাদ মাগরিব মরহুমের বাড়ীর মসজিদে এক সংক্ষিপ্ত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী প্রমুখ।
Development by: webnewsdesign.com