”শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই” এমন পোষ্টার লাগিয়ে রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তথা নেট দুনিয়ায় মুহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হওয়া শিক্ষিত বেকার যুবক আলমগীর কবিরের জন্মভুমি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী বরাইল গ্রামের পল্লীচিকিৎসক কফিল উদ্দিনের ছেলে। কবিরের এমন অসায়ত্বের খবর ফেসবুকসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্টমিডিয়ায় প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান তার পাশে এগিয়ে আসে। কয়েকদিন আগে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সেই আলোচিত সমালোচিত আলমগীর কবিরকে চাকুরী দেয় সুপার শপ ’স্বপ্ন’। ছেলের চাকুরী হয়েছে জানতে পেয়ে রাতে এখন শান্তির ঘুম হয় বলে, জানান বাবা কফিল উদ্দিন। শনিবার কবিরের গ্রামের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় তার বাড়িতে গ্রামবাসীরা এসে ভির করছে। তাদের সবার মুখে একই কথা এইবার ছেলেটার একটা সৎগতি হল। তার বাবা-মা,গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরাও বেশ খুশি ও আনন্দিত এমন সুখবরে। কবিরের বাবা ছেলের সুখবরের কথা বলতে গিয়ে দু’চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু ঝড়তে দেখা যায়। ছেলে চাকুরীর বেতনের টাকা দেক বা না দেক বাঁকি জীবন সে সুখে থাক এটাই আমাদের আনন্দ।
নাটকীয় ভাবে এমন একটি প্রতিষ্ঠিত জায়গায় চাকুরী পাওয়ার পর অনুভুতি ও বাবা-মার জন্য কি করবেন জানতে চাইলে আলমগীর মুঠোফোনে বলেন, যে বাবা-মা আমার জন্য এত কষ্ট করেছে তাদের সুখের জন্য আমি সব করব।
আলমগীরের আরেক মায়ের এক ছেলেসহ দু’ভাই এবং ৪ বোন। সৎভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী ও একবোন মারা গেছে। মেয়েদের বিয়ের খরচ যোগাতে এবং কবিরকে বগুড়ায় মেচে রেখে পড়াশোনার খরচ চালাতে ৪ বিঘা জমির ৩ বিঘাই বিক্রয় করেছি বলে জানায় পল্লীচিকিৎসক কফিল উদ্দিন। ১ বিঘা জমির ফসলে সংসার আর চলে না। ছেলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরও চাকুরী না হওয়াতে রাতে আমার ঘুম হয় না। বয়স হয়েছে ডাক্তারীও তেমন করতে পারি না। বাড়িতে বিধবা একটা মেয়ে আছে দর্জির কাজ করে সেই এখন সংসার চালায় এবং কবিরের খরচের টাকা পাঠায়। কবিরের বিধবা বড়বোন নুরজাহান আক্তার মিষ্টি বলেন, গ্রামের মানুষের জামা-কাপড় সেলাই-ফোরা করি এবং হাঁস-মুরগী ও কয়েকটা ছাগল লালন পালনের আয় দিয়েই সংসার খরচ ও কবিরকে দিয়ে আসছি।
প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলেটা খুব ভালো এবং শান্ত প্রকৃতির। বছরে দুই ঈদ ছাড়া বাড়িতে খুব কম আসে এলেও ৩-৪ দিন পরেই আবার বগুড়ায় চলে যায়। ছেলেটা যে কয়দিন থাকে বাড়ির বাহিরে বের হয়না বলেও জানান মনোয়ারা বেগম। একই এলাকার ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শিল্পী নাহারও একই মন্তব্য করে। তিনি আরো বলেন, কবিরদের সংসারে অনেক অভাব তার বাবার এখন আর তেমন ডাক্তারী পেশা ভালো চলে না বয়সের কারনে। তবে টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে আলমগীর কবিরের চাকুরী হওয়ার খবরে অন্যদের মত তিনিও খুশি হয়েছেন।
পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব বলেন, উপজেলার বরাইল গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক আলমগীর বগুড়াতে ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই পোষ্টার লাগিয়ে ভাইরাল হলে থানা পুলিশ তার পরিবারের খোজ নেয়। তার বাবা-মা ও গ্রামবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রকৃতই তারা অভাবী।
Development by: webnewsdesign.com