আরডিএ চাঞ্চল্যকর প্লট জালিয়াতির মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র দাখিল

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ | ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

আরডিএ চাঞ্চল্যকর প্লট জালিয়াতির মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র দাখিল
apps

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চাঞ্চল্যকর প্লট জালিয়াতির মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৫ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের আটটি প্লট জালিয়াতির ওই ঘটনা ঘটে। রাজশাহীর স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার ভূয়া কপি ছাপিয়ে সেখানে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছিল। ওই পত্রিকার যে সংখ্যাটি সেদিন বাজারে ছিল, তাতে বিজ্ঞাপন ছিল না।

ভয়ংকর এই জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন আরডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদারও। দুদকের অভিযোগপত্রে তাঁকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মোট ৭ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন রাজশাহীর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তিনি তিনজনকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়ার সুপারিশ করেছেন। মো. আল-আমিন এ মামলার বাদীও।

অভিযোগপত্রে আরডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ছাড়া অন্য যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁরা হলেন- তৎকালীন এষ্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক রস্তুম আলী, সহকারী মোস্তাক আহম্মেদ, প্লট গ্রহীতা রাজশাহী বিশবিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এআর শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, এনামুল হক ও অ্যাসথেটিক ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এমডি মাহফুজুল হক।

অভিযোগপত্র থেকে মামলার যে তিন আসামিকে অব্যহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাঁরা হলেন- প্লট গ্রহীতা ডা. এসএম খোদেজা নাহার বেগম, রাজশাহীর জিলিয়া মেডিকেয়ারের মালিক ডা. রবিউল ইসলাম খান স্বপন ও খায়রুল আলম। তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, এরা নিজ দলিল সম্পাদন ও নাম খারিজ না করায় তাদেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে মামলা দায়েরের সময় আরেকজন প্লট গ্রহীতা আবুল কাশেম মারা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়েছিল না।

২০০৬ সালের গোপনে এসব প্লট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার পর সুমন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি মার্চে দুদকে অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পর দুদক এ ব্যাপারে মামলা করে।

অবশেষে অভিযোগপত্রও দাখিল হলো। কিন্তু তিনজনকে অভিযোগ থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ থেকে হতাশ সুমন চৌধুরী। তিনি বলছেন, যে তিনজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তারাও সমান অপরাধী। এ বিষয়ে তিনি আদালতে পক্ষভুক্ত জনস্বার্থে নারাজি দাখিল করবেন।

সুমন চৌধুরীর আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, একটি জালিয়াতি প্রক্রিয়ায় যুক্ত থেকে আবেদন করা, বরাদ্দপত্র গ্রহণ এবং আবার চড়ামুল্যে এসব প্লট অন্যত্র বিক্রিও করা হয়েছে। ৮টির মধ্যে ৪টি প্লট রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে। প্লট গ্রহীতাদের কাউকেই এই মামলা থেকে অব্যাহতির সুযোগ নেই। রহস্যজনক কারণে তিন আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার কাগজপত্র হতে জানা যায়, ২০০৫ সালে আরডিএ’র প্রায় ১০ কোটি টাকা মুল্যের ৮টি বাণিজ্যিক প্লট জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। রাজশাহীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার এসব প্লটের মোট আয়তন ছিল প্রায় ৫১ কাঠা। প্রতিটি প্লটের আয়তন সাড়ে ৬ কাঠা করে। অভিযোগ দাখিল করার ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে অনুসন্ধান কাজ শেষ করে দুদক। ওই বছরের ২ অক্টোবর ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলা দায়েরের ১ বছর ৮ মাস পর আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র জমা হয়েছে আদালতে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাজশাহীর স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এসব বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ ও প্রচার দেখানো হয়েছিল। পত্রিকার ওই সংখ্যাটি ছিল নকল। একই দিনে প্রকাশিত পত্রিকাটির আসল কপিতে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল না। নকল পত্রিকাটি আরডিএ’র প্লট বরাদ্দ ফাইলে সংযুক্ত থাকলেও একই দিনের আসল পত্রিকা সংগ্রহ করে দুদক দেখতে পায়, সেখানে বিজ্ঞপ্তিটি নেই। পূর্বপরিকল্পিতভাবে নকল পত্রিকা ছাপিয়ে প্লটগুলোর জন্য মাত্র আটজনকে আবেদনের সুযোগ করে দিয়ে তাদেরকেই মাত্র দুই লাখ টাকা কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দুর্নীতির ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী বলেন, প্লটগুলো বরাদ্দের সময় প্রতি কাঠা জমি মাত্র দুই লাখ টাকায় দিয়েছে আরডিএ। অথচ ওই সময় শহরের চন্দ্রিমা এলাকার এক কাঠা জমির দাম ছিল অন্তত ২০ লাখ টাকা। কম দরে গোপনে প্লটগুলো বরাদ্দের ফলে কাঠা প্রতি সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৮ লাখ টাকা করে। মোট ৫১ কাঠা জমিতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে চন্দ্রিমা এলাকার প্রতি কাঠার জমির বাজার মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। ভয়াবহ এই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা তিনজনকে অব্যহতির সুপারিশ করা রহস্যজনক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তার জন্য কারণ আছে। যাদের অব্যহতির সুপারিশ করা হয়েছে, তার জন্যও কোন না কোন কারণ আছে। তবে আদালতে থাকা বিষয় নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।’

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসঅরসি-২৮

Development by: webnewsdesign.com