আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট কারচুপি করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতেই নির্বাহী আদেশে সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
গতকাল সোমবার বিকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে সিনিয়র নেতারা এই অভিযোগ করেন। দলটির নেতারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনের ভোট রাতে করলেও এবার দ্বাদশ নির্বাচন দিনেই কারচুপি করতে চায়। সরকারের এই সমস্ত অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আন্দোলন করতেই হবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশনস-বিএনআরসির উদ্যোগে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের সরকারি সিদ্ধান্ত : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার পুনরায় লুন্ঠনের এক নতুন ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের পরিচালনায় এতে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ইসির সাবেক সচিব আব্দুর রশিদ সরকার, ড. মোহাম্মদ জাকরিয়া, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে পুরো রাষ্ট্রের কাঠামোকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এটা ভয়াবহ অপরাধ। স্বাধীনতা যুদ্ধের ভাবনা-আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র- তারা পুরোপুরিভাবে বদলে দিতে শুরু করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে রাজনৈতিকভাবে সমাধান আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, আজকে যেটা বড় প্রয়োজন জনগনের ঐক্য। এই ঐক্যের মাধ্যমে আমাদেরকে একটা গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
এসময় বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার গায়ের জোরের ভোটবিহীন সরকার। তারা তো কোনো সময়ে ধর্মের অর্থাৎ আমরা যে সংবিধানের অনুশাসনের কথা বলছি তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) মানবে না। এর একমাত্র সমাধান জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সরকারের সব অন্যায়ের প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিকভাবে করতে হবে। কিন্তু সেখানেও যদি বাধা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কী করা উচিত তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়ায় সরকারের রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মূলে রয়েছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নিশ্চিত করা। তবে, গুরুত্বপূর্ণ এনআইডি সেবা যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে তখনও মানুষকে নানাবিধ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এই দেশের জনগণ চায়, বিএনপি এই সরকারের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলুক, প্রতিবাদ করুক। সে জন্য কী কারণে সরকার এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে হবে। তারা যেন আগামী নির্বাচনের আগেই সতর্ক হতে পারেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সব কিছুই এখন মোটামুটি নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেখবেন বিচার বিভাগ, সংসদ সব কিছু। ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ক্ষেত্রে ছোটখাটো যদি কোনো সমস্যা হতে পারে সেগুলোকেও এখন নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিতে নানা কার্যক্রম করছে সরকার।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা দেখছি সিরিয়ার বাশার আল আসাদ শতকরা ৯০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে ইভিএম প্রক্রিয়ায় ভোট করে ৯৫ ভাগ ভোট পেয়ে শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। একাদশ নির্বাচন যেহেতু দিনের ভোট রাতে করেছে, এবার একটু ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তারা দিনেই ভোট কারচুপি করবে।
Development by: webnewsdesign.com