অনিশ্চয়তায় প্রতিটি দিন কাটায় জাহানারা বেগম

শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১ | ৪:০৬ অপরাহ্ণ

অনিশ্চয়তায় প্রতিটি দিন কাটায় জাহানারা বেগম
apps

দিনাজপুরের হাকিমপুর(হিলি) পৌর শহরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (মহিলা কলেজ পাড়া) গ্রামের মৃত সোহরাফ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৮)। এই বয়সে এসে তিনি ভীষণ একা। অন্যনের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটে তার। এমনকি ঘুমানও তাদের বাড়ির বারান্দায়। রোগে-শোকে তাকে দেখার কেউ নেই। প্রতিটা দিন অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে তার।

জাহানারার স্বামী ২৮ বছর আগে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় রেখে যান দুই মেয়ে ও এক ছেলে। অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন জাহানারা। ছোট ছোট তিন সন্তানের মুখে তুলে দেওয়ার মতো খাবার ছিল না তার ঘরে। আত্মীয়-স্বজনের অবহেলা-অবজ্ঞায় বড় হতে থাকে ছেলে-মেয়েরা। কয়েক বছর পর বড় মেয়েকে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে বিয়ে দেন। বাকি থাকে মেজ মেয়ে আর কোলের ছেলে নুরনবী।

মানুষের বাড়ি আর ইটভাটায় রান্নার কাজ করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোনোরকমে চলতে থাকেন জাহানারা। শেষে যখন আর কোনো কাজ জুটছিল না, নিরুপায় হয়ে কোলের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকা শহরে।

আজব শহর ঢাকায় পরিচিত তেমন কেউ ছিল না, পথঘাট কিছু চেনেন না। অনেক চেষ্টা-তদবির করে কাজ জোগাড় করে নেন পোশাক কারখানায়। শুরু হয় নতুন জীবন-সংগ্রাম। গ্রামের মেয়ে শহরে তাকে ভয়ে থাকতে হয়। এভাবে দিন, মাস, বছর পার হতে থাকে। মেজ মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। দেখেশুনে বিয়ে দেন তাকে।

এখন একমাত্র অবলম্বন ছেলে নুরনবী। ছেলের বয়স তখন ১৭ বছর, দেখতে সুদর্শন। ছেলেকে নিয়ে একটু সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন জাহানারা। ছেলে রোজগার করবে, তার দুঃখ থাকবে না। নুরনবী ট্রাকের হেলপারির কাজ শুরু করে। অল্পদিনে ড্রাইভারও হয়ে যায়।

নুরনবী যখন বাস চালিয়ে উপার্জন শুরু করেন। মা খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন ভালো পাত্রীর। মায়ের ইচ্ছা- ছেলের বিয়ে দিয়ে তারা ফিরে যাবেন গ্রামে। যে গ্রামে চিরতরে ঘুমিয়ে আছে তার স্বামী। নাতি-নাতনির সঙ্গে জীবনের বাকি সময়টা সেখানে কাটিয়ে দেবেন।

কিন্তু সেই স্বপ্ন জাহানারার পূরণ হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার ছেলে নুরনবী। থমকে যায় তার জীবন। স্বামী ও ছেলে হারা হলেন তিনি। দুটি মেয়ে আছে তার। মেয়েরা যার যার সংসারে তারা ব্যস্ত। এখন তার দেখার কেউ নেই। সামনের পথটা অন্ধকার।

কিন্তু জীবন তো নিজস্ব গতিতে চলবে। একমাত্র ভরসা ছেলেকে হারিয়ে ঢাকা শহর জাহানার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। এক সময় এই হিলিতে তার স্বামী-সন্তান সবই ছিল। আজ তার কেউ নেই। নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ জাহানারা বেগম।

হিলিতে জাহানারা বেগমের মাথা গোজার ঠাঁই নেই। আত্মীয়-স্বজনরাও তার খোঁজ নেই না। ৮-১০ বছর ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করেন, আর যে যা দেয় তাই দিয়ে জীবন চালিয়ে নেন। কারও বাড়ির মেঝেতে বা বারান্দায় রাত কাটিয়ে দেন তিনি।

জাহানারা বেগম বলেন, ঈদের আনন্দ কী, তা ভুলে গেছি। আমি সর্বহারা জনমদুখিনী। স্বামী চলে গেলো। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম! সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার বাড়ি-ঘর নেই। মানুষের বাড়ি কাজ করি, সেই বাড়ির বারান্দার ফাঁকে রাত কাটিয়ে দেয়।’

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, জাহানারা বেগম এর বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি তার জন্য বিধবা ভাতার কার্ড এবং একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com